কি কইব দুস্কের কথা,আমি বুদ্ধিভুতা মানুষ একটা গান লেখতে গিয়ে আমার জান শেষ।
কিছুদিন আগে একটা গান লিখেছিলাম,পলাশ ভাই গেয়ে আমাকে দিয়েছিলেন আর আমি বসে বসে শুনছিলাম।
| দুই চাক্কার গাড়ি বানাই |
| ভবের রূটে দিছে পাঠাই |
কিন্তু গানের আওয়াজ রঙ্গীলির কানে পৌছতে না পৌছতেই…
রঙ্গীলিঃ এই গানটা লেখছে কে?
আমিঃ কেন কি হইছে?আমি লেখছি।।
রঙ্গীলিঃ তাইতো ৪চাক্কার গাড়ি কে ২চাক্কা লেখেছ।
আমিঃ এই গাড়ি সেই গাড়ি না।।
রঙ্গীলিঃ তাইলে লেখ ২চাক্কার সাইকেল বা মটর সাইকেল।আর ভবের রূটে না,বল মিরপুর রোডে দিছে পাঠাই।
| ইঞ্জিন একবার বন্ধ হলে |
| চলবে না আর ধাক্কা দিলে |
রঙ্গীলিঃ চলবে না কেন? আমাদের গাড়িত ধাক্কা দিয়ে দিয়েই চালাতে হয়।
| ডেস্টিনেশন দিছে বলি |
| দুটি রাস্তা রাখছে খুল ।|
রঙ্গীলিঃ আবারো ভুল, ডেস্টিনেশন না পেট্রোল স্টেশন হবে।
| দিছে একটা মনো ফোন |
| ডাইরেক্ট মিলে কানেকশন |
রঙ্গীলিঃ মনোফন না,গ্রামীন ফোন হবে।
সঠিক দিশায় চালাও গাড়ি
পৌঁছতে হবে বন্ধুর বাড়ি।
রঙ্গীলিঃ কী বন্ধুর বাড়ি? তাইতো ভাবি মাঝে মাঝে সেজেগোজে কোথায় যাওয়া হয়?
আমিঃ আরে তুমি ভুল বুঝতেছ।এই বন্ধু সেই বন্ধু না।
রঙ্গীলিঃ তাই যদি না হয়,শশুর বাড়ি লেখলা না কেন?
আমিঃউফফ…ভুল হইছে বাবা আমাকে মাফ কর।আমি আর জীবনে কোনদিন গান লেখার ভুল করব না।
রঙ্গীলিঃ গান লেখার ভুল করলেও আমি তোমাকে গানে ভুল লেখতে দেব না।আমি কম জানলেও তোমার চাইতে বেশি বুঝি।তাছাড়া আমার একটা প্রেস্টিজ আছে না।
2.
আপনাদের হয়ত মনে আছে আমার এক পোস্টে আমি বলেছিলাম আমার রঙ্গীলি জানে কম কিন্তু বুঝে একটু বেশি।
না না,ভুল বুঝবেন না। আমি ওর নিন্দা করছি না, প্রশংসাই করছি। সেও বান্ধবিদের সামনে আমার খুব প্রশংসা করে। এইত সেদিন আমাদের বাসায় ওর বান্ধবিরা এসেছিল আমি পাশের ঘরে বসে লাপটপে নাটক দেখছিলাম। হঠাৎ শুনি আমার রঙ্গীলি বলছে…
তোমাদের এইসব কথা বার্তা আমার মোটেই ভাললাগে না, তোমরা সব সময় নিজের স্বামীর মন্দ দিকটা নিয়েই আলোচন কর।
আমাকে দেখ! আমার স্বামী যে হাড় কিপটে আমি কি তোমাদের কখনো বলেছি?
৫ হাজার চাইলে দিবে ৫০ টাকা। আর এত অলস যে রান্না বান্নায় একটু হাত বাটানোর কথা কইলেই একশ একটা বাহানা বানাবে। একটু ধমক দিয়া কথা কইলেই কাঁদতে শুরু করে ভিতু, কাপুরুষ। আমি কি এইসব তোমাদের কখনো বলেছি? বলিনাই না! আর কোনদিন বলবও না।
দেখলেনতো সে কত ভাল এবং সহজ সরল।
…………………………………………………
গান লেখা ছেড়ে দেওয়ার পর একটু গান গাওয়ার প্র্যাকটিস শুরু করি,ভাবলাম এতে সিডি কিনার পয়সাটা আর অনলাইনে খুঁজা খুঁজি করতে যে বিদ্যুত খরচ হয় সেটাও বেচে যাবে।
তো একদিন কিচেনে আমার স্পেশাল রেসেপি ডিম সিদ্ধ করতে করতে গাইতেছিলাম আর এই লাইনটা বারবার প্র্যাকটিস করছিলাম…
“আগুন, আগুন, আগুন লাগছে আমার গায়”… হঠাৎ পিছন থেকে রঙ্গীলি আমার মাথায় এক বালতি ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিল। এতে আমার মধুর কন্ঠটা বসে যাওয়াতে ওইদিন আর গান গাইতে পারলাম না।
……………………………………………………………………………
পরদিন ভাবলাম কিচেনে আর গান গাওয়া যাবে না, তাই বেডরুমের পাশে বারান্দায় জায়গা করলাম।
রাত্রে শুরু করলাম এই লাইন দিয়ে…
“আমায় এত রাতে কেনে ডাক দিলি” ব্যাস আর এগুতে পারিনি পিছন থেকে আওয়াজ আসে কে? কে এত রাতে তোমাকে বারান্দা দিয়ে ডাকা ডাকি করে?
ছিঃছিঃ তুমি এই বয়সেও…।
যাও তুমি ঘরে যাও, আমি এখানে বসে দেখব কে তোমাকে ডেকেছে।আজ আমার একদিন না হয়…।
…………………………………………………………………………………………।
পরদিন কিচেন আর বারান্দা বাদ দিয়া আসর বসাইলাম সিটিং রুমে। এক খান বড় চামচ আর একটা ডেস্কি লইয়া শুরু করলাম।
“আমার বন্ধু ময়ুরী”……।
টান আর ভাল করে দিতে পারিনাই পিছন থেকে আইসা গলা টিপে ধরল।আপনাদের দোয়ায় অল্পের জন্য বেচে গেলাম। এর পর আমি কইলাম এই জীবনে গান গাওয়াতো অনেক দুরের গান শুনবই না। কিন্তু সে বললো না তোমাকে গান গাইতে হবে আর তাও কোন ময়ুরী ইন্দুরীর নামে না।আমার জন্য শুধু আমার জন্য তুমি গাইবে আর এখনই গাইবে।
মনে মনে একটু সাহস পাইয়া এই গানটা শুরু করি…
তুমি আমার জীবন,
তুমি আমার মরন।
তুমি আমার আশা,
তুমি আমার ভালবাসা।
তুমি আমার স্বপন,
তুমি আমার একমাত্র আপন।
তুমি আমার মোজা-জুতা,
তুমি আমার হাগা-মুতা।
রঙ্গীলি বলছে, wait, Wait.তুমি একটু থাম আমি তোমার জন্য একটা গান গাই শুন…..
তুমি আমার সুখ,
তুমি আমার দুঃখ।
তুমি আমার হাসি,
তুমি আমার খুসি।
তুমি আমার আকাশ,
তুমি আমার বাতাস।
তুমি আমার ব্যথার ট্যাবলেট,
তুমি আমার স্বদেশী টয়লেট।
আমি কইলাম ব্যাস ব্যাস যথেষ্ট হয়েছে তোমাকে আর কষ্ট করে গাইতে হবে না। বাকিটা আমি বুঝে গেছি।
……………………………………………………………
ভাইজানেরা গান গাইতে হলে একটু সাবধানে গাইবেন। আমার অবস্থা বুঝতে পারছেন তো!