হঠাৎ একদিন অনামিকার ঘরের পাশে সপিং সেন্টারে সজলের সাথে দেখা।সজকলে দেখে চিনেও না চেনার ভান করে অনামিকা হাঁটতে থাকে।রাস্তা পার হয়েই একটু পর অনামিকার বাসা।পিছন থেকে নীলিমা,নীলিমা ডাকতে ডাকতে সজল অনামিকার বাসার সামনে এসে পৌঁছে।অনামিকা ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে চাবি বের করার সময় ইছা করেই সজলের দেওয়া একটা লকেট মাটিতে ফেলে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই পিছন দিকে না থাকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
অনামিকা যে নীলিমা সেটা নিশ্চিত করার জন্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে লকেটটি ফেলে এসেছে।অনামিকা যানে লকেটটা দেখার পর সজল নিশ্চিত হয়ে যাবে এবং দেখা না করে যাবে না।আর তাই হলো।
সজল বারবার কলিং বেল টিপছে।অবশেষে অনামিকা দরজা খুলতেই সজল ঘনঘন শ্বাস টেনে বলল,তুমি নী……।
অনামিকা সজলকে ঘরের ভিতর আসতে দিয়ে বলতে লাগলো,হ্যাঁ,কোন এক সময় নীলিমা ছিলাম।কিন্তু এখন আমি অনামিকা এবং এর জন্য দায়ী তুমিই,শুধু তুমি!সব কিছু ত্যাগ করে তোমার মতো কাপুরুষের হাত ধরে সুখের সন্ধানে সর্বহারা হয়েছিলাম বলেই আজ আমাকে অনামিকা সাজতে হয়েছে।শুধু তোমার কারণে,হ্যা,শুধু তোমার কারণেই আমার সুনীল আকাশ মেঘে ডাকা পড়েছে।কিন্তু তারপরও বেঁচে আছি।তুমি হয়তো ভেবেছিলে গলায় দড়ি দিয়ে বা বিষ খেয়ে আমি আত্ম হত্যা করবো আর তোমার রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।তোমার মত স্বার্থপর একটা কাপুরুষের জন্য জীবন বিসর্জন দিব?হা,হা,হা,।আজ আমাকে এখানে দেখে অবাক লাগছে তাই না?লাগারাই কথা,কারণ আমার মতো এতিম মামার বাড়ি আশ্রিতা,অন্ন কম আর মামীর বকা বেশী খেয়ে বড় হওয়া মেয়ে আজ লন্ডন।তোমার হিহাব মতে তো আজ আমি মরহুমা বা পাবলিক প্রপার্টি হয়ে যাওয়ার কথা।কারণ তুমি ভালো করেই জানতে যে আমি যাই করি তোমার এই পাপের বোঝা নিয়ে মামার বাড়ি ফিরে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব ছিল না।তাই তুমি আমার সব কিছু লুটেপুটে,আসি বলে আমাকে হোটেলে রেখে চোরের মতো পালিয়ে ছিলে।মনে করেছিলে যে এই পৃথিবীতে সবাই তোমার মতো নরপশু আর আমার মতো বোকা।
খান সাহেবের মতো সৎ এবং জ্ঞানী লোকজন এখনও এই পৃথিবীতে আছেন বলেই আমার মতো অনামিকারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং বেঁচে থাকার সৎ সাহস পায়।দেখ না,ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,আমি তোমার জন্য সব ত্যাগ করে এসেছিলাম ভালবাসার রঙিন স্বপ্ন দেখে।আর সেই তুমি আমাকে ফাঁকি দিয়ে,সুখের স্বপ্ন দেখে লন্ডনী মেয়ের আঁচল ধরে এসেছিলে তোমার স্বপ্নের শহর লন্ডন।কিন্তু আজ তোমার জন্য আমার করুণাও হয়না।কারণ এই সবই তোমার পাপের ফসল।তোমার সব থাকা সত্যেও শূন্য,সর্বহারা হয়ে আছো,না ঘরের,না ঘাটের।আর আমি!আজ আমার ওইসব-ই আছে যা তোমার চাই।টাকা,পয়সা,ঐশ্বর্য যাকে তোমার ভাষায় বলে সুখ পাখি।কিন্তু নেই কোন স্বপ্ন,নেই কোন আপনজন এখানে যার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে পারি।এই সবই নিয়তির খেলা।আজ বুঝতে পারছি বকা খেলেওভাল ছিলাম মামার ওখানে,অন্তত মামাতো বুকে জড়িয়ে আদর করে বলতো কাঁদ মা কাদ,প্রান খুলে কাঁদ,কেঁদে মনের কষ্ট হালকা করে নে।নতুবা তুই দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে,না হয় তোর এই কমল মনটা পাথরের মতো কঠিন হয়ে যাবে।মামা ঠিক বলেছিল,আজ আমি সত্যি সত্যিই এক পাথরের মতো হয়ে গেছি।নেই কোন আবেগ,না আছে কোন অনুভতি,না আছে কোন আশা আকাঙ্ক্ষা।এক জীয়ন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছি।আজ মামা বেঁচে থাকলে তার কাছেই ফিরে যেতাম এবং গলায় জড়িয়ে প্রাণ খুলে কাঁদতাম আর বলতাম,মামা আমাকে ক্ষমা করে দেও।আমি ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তোমার পাঁচ হাজার টাকা চোরি করে নিয়ে গিয়েছিলাম।এই নেও তোমার পাঁচ হাজারের বদলে পাঁচ লাখ দিলাম।
মামা বলতো,দে’ রে মা’দে,তাড়াতাড়ি দে’ তোর মামীকে দিয়ে আসি।টাকাই সব সুখের মূল এই বলে শক্ত হাতে চড় দিয়ে বলতো সব আমার কপালের দোষ।আমি পারলাম না,পারলাম না রে…।