ফ্রিজ থেকে কোকা-কোলার দুইটা ক্যান আর কিট-কাট চকলেট হাতে নিয়ে শামীম আর জীবন গাড়িতে ঊঠে।শামীম গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলছে কোন দিকে যাবো?সামনে গিয়ে বামে এটিএম এর সামনে থামবে,তারপর পেট্রোল স্টেশনে গিয়ে টাঙ্কি ফুল করবে বলছে জীবন।এটিএমের সামনে এসেই শামীম গাড়ি থামায় জীবন নেমেই পকেটে হাত দিয়ে ফিরে এসে আবার গাড়িতে উঠে শামীমকে বলছে গাড়ি ঘুরা ওয়ালেট আনতে ভুলে গেছি।ওয়ালেট লাগবে না আমার কাছে যা আছে এতে টাঙ্কি ফূল হয়েও থাকবে বলছে শামীম।জীবন বলছে তোকে বলেছি গাড়ি ঘুরাতে তুই গাড়ি ঘুরা নইলে স্টিয়েরিং আমার হাতে দে।তোর হাতে আজ স্টেয়ারিং দেওয়া মানে নিজের কূলখানির ব্যবস্থা করা বলছে শামীম।
-শালা!তোমরা মরনকে এতো ভয় পাও কেন?
-মরণের চাইতে জীবনকে বেশী ভালোবাসি বলে তাই।
-তুই কি মনে করিস জীবনকে ভালোবাসলেই মরণের হাত থেকে পেয়ে যাবে রেহাই?
-তুই খাড়া আমি যাচ্ছি আর আসছি ২মিনিট।তো আর কিছু লাগবে বলে জীবন গাড়ি থেকে নেমে যায়।
-শালা তোর মতিগতি ঠিক না।আমিও আসছি ফিসফিস করে বলছে শামীম।
জীবন ঘরের দরজা খুলে সোজা রুমে চলে যায়।টেবিলের উপর থেকে ওয়ালেটটা হাতে নিয়েই আবার বেরুয়ে আসে। এক পা ঘরের ভিতরে আরেক পা বাহিরে,ঠিক এইসময় টেলিফোনের ঘন্টি বেজে ওঠে।শালা!এখন আবার কে ফোন করেছে বলে দৌড়ে ফোন ধরতে যায়।জীবন ফোন ধরার আগেই লাইন কেটে যায়।জীবন একটু দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।কে হতে পারে? সাথী?আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবো?এইসময় শামীম এসে বলছে আমার মাথাটা একটু ব্যাথা করছে,প্যারাসিটামল আছে?থাকলে দুইটা নিয়ে আয়,আমি মাকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি আজ তোর এখানেই থাকবো।মাথাতো আমারও ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে।আমিও দুইটা না খেলে মাথা খাড়া রাখতে পারব না।তুই খালাম্মাকে জানিয়ে দে আর আমি তোর জন্য প্যারাসিটামল আর চা বানিয়ে নিয়ে আসছি বলে জীবন কিচেনে চলে যায়।
আরে না চা লাগবে না।কফি থাকলে ব্লাক কফি এক কাপ নিয়ে আয় বলছে শামীম।জীবন কেটল অন করে বাথরুমে চলে যায় হাত মুখ ধুয়ে একটু ফ্রেস হতে।সারাটা দিন না খেয়ে আছে রাত্রেও ভালো ঘুম হয়নি তাই চোখ লাল হয়ে আছে।জীবন হ্যান্ড শাওয়ার দিয়ে মাথায় একটু পানি দিচ্ছিলো এই সময় ফোন বেজে ঊঠে।শামীম ফোন ধর আমি আসছি বলেই তড়িঘড়ি ছুটে আসে।আসার সময় হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে অল্পের জন্য বেঁচে যায়। এই নে তোকে চায় বলে শামীম ফোট জীবনের হাতে তুলে দিয়ে কিচেনে কফি বানাতে চলে যায়।
-হ্যালো সাআআ
-আপনে জীবন?
-কিন্তু আপনি?
-আপনি যাকে খুজছেন তার বান্ধবী।
-আপনি সাথীর ফ্রেন্ড?
-জ্বী,ঠিক ধরেছেন।
-সাথীকে একটু দেন প্লিজ।
-স্যরি!সাথী নেই।
-হোয়াট?নেই মানে?
-আই মীন সাথী তার বাসায়।আমি সাথীর হয়েই আপনাকে ফোন করেছি।
-কেন? সাথীর কী হয়েছে?
-অনেক কিছুই ঘটতে পারতো।থ্যাঙ্কস গোড!কিচ্ছু হয়নি।
-ভূমিকা না টেনে একটু সর্টকাট বলবেন কি প্লিজ!
-আপনি এতো ইম্পেইশন্ট্ (অধৈর্য)কেন?
-তা আপনার বান্ধবীই ভালো বলতে পারবে।
-চিঠি পড়েছেন?পরিচয় পেয়েছেন?
-দেখুন খুঁচা দিবেন না!আপনার যা বলার সরাসরি বলে ফেলুন প্লিজ।তারপর আমার কিছু কথা আছে যদি আপনি বলার সুযোগ দেন তো।
-আগে আপনারটাই বলুন শুনি কী বলতে চান!
-আসলে বলতে নয়,জানতে চাই।আপনার বান্ধবীর আসল পরিচয়টাই শুধু জানতে চাই।এইটা কী বেশী চাওয়া হয়ে গেল?
-পরিচয় জেনে কী করবেন কৃপা করে একটু বলবেন কী?
-ডাকাতি করতাম।আপনি কী বুথ থেকে কল করছেন?চাইলে আমি আপনাকে কল ব্যাক করতে পারি।
-বুঝলেন কী করে?
-কমন সেন্স।আপনি সাথীর বান্ধবী না!
-আমার বান্দবীকে খুব ভালই জানেন দেখছি!ঠিক আছে নাম্বার লিখে রাখুন এখনো কিছু পয়সা বাকি আছে।লাইন কেটে গেলে কল ব্যাক করবেন।
-হ্যালো,আছেন?লিখে রাখছি।লাইন কেটে গেলে কল ব্যাক করব।আপনি যাবেন না কিন্তু।
-জ্বী,আছি বলেন?
-আমার যা বলার ছিল আপনাকে বলে দিছি।এখন আপনার উত্তরের অপেক্ষা।
-কিন্তু আপনার এই প্রশ্নের উত্তর যে আমার কাছে নেই।
-জ্বি আর বলতে হবে না।আমার বুঝ হয়ে গেছে।এক ক্ষুরে মাথা কামানো!( ফিসফিস করে)বলছে জীবন।
-কী বললেন?আবার বলুন।
-না,বলেছি চুল অনেক লম্বা হয়ে গেছে।ক্ষুর দি্যে কামানোর সময় এসে গেছে।আপনি যা বলার জন্য এসেছেন বলে ফেলুন।আপনাকে দিয়ে আমার কোন কাজ উদ্ধার হবে না।আমার কাজ আমাকেই করতে হবে।
-ভাগ্যে বিশ্বাস করেন? যদি করে থাকেন তাহলে মনে করেন আপনার আর আপনার সাথী,দুজনেরই ভাগ্যটা খারাপ।
-আমার সাথী? কিসের উপর ভিত্তি করে বললেন?গাছে কাঁটাল আর গোঁফে তেল।জানা নেই,চেনা নেই,দেখা নেই সাক্ষাত নেই।সাথী আমার হয়ে গেল এমনিতেই!দেখুন আমি কোন যুক্তি তর্কে যেতে চাই না।আমি আপনাকে অনুরোধ করছি।আপনি সাথীর আসল পরিচয়টা আমাকে দিয়ে পাগল হওয়া থেকে বাচান প্লিজ।তাও যদি না পারেন।অন্ততো ওর সাথে একবার আমাকে কথা বলার সুযোগটা করে দেন।
-ভাগ্য সুযোগ না দিলে আমি কি করব বলুন!আজ সে এসেছিল আপনার সাথে প্রান খুলে কথা বলতে।কিন্তু আপনি দিলেন তো ওর মনটা ভেঙ্গে চুরমার করে।আমি না ধরলে আজ হয়তো গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারাই যেতো।কী করবেন আপনি পরিচয় যেনে?ওর ভাগ্য তো আর আপনে বদলাতে পারবেন না!আমি শুরু থেকেই বলে আসছি সাথী তুই এই পথে পা বাড়াসনে।আমাকে দেখ,আমি কি চেয়েছিলাম জীবনে আর কি পেয়েছি!মেয়ে হয়ে জন্মানোই মনে হয় আমাদের অপরাধ।এই যোগেও আমাদেরকে জীয়ন্ত কবর দেওয়া হয়।ইমোশনালী ব্ল্যাক মেইল করে আমাদের আশা,আকাঙ্ক্ষার খুন করা হয়।আমরা ফুলদানীর মত,উই হ্যাভ নো চয়েস।আমাদের ফিলিংসের কোন কদর নেই।তুই এতো বড় রিস্ক নিতে যাসনে।মরণ ফাঁদে পা দিসনে।
-দেখুন!আপনার কথার আগাগোড়া কিছুই আমি বুঝতে পারছি না।আপনে কি আরেকটু খুলে বলবেন?
-আমার কথা বুঝতে সত্যিই কি কষ্ট হচ্ছে জীবন ভাই?নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছেন?
লাইন কেটে যায়।জীবন বারবার ট্রাই করছে কিন্তু “ নাম্বার উই হ্যাভ ডায়েল্ড নোট বীন রেকগনাইজ” প্রম্পট শোনায়।
চলবে>>>